রিচার্লিসন টটেনহামে যোগ দিয়েছেন খুব বেশি দিন হয়নি। এ বছর জুলাইয়ের শুরুতে এভারটন থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে উত্তর লন্ডনের ক্লাবটিতে আসেন ব্রাজিলিয়ান এ ফরোয়ার্ড। এই পাঁচ মাসের মধ্যে হেউয়েং-মিন সনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেছেন তিনি।







এই দুই প্রিয় বন্ধু আজ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে মুখোমুখি হচ্ছেন। বন্ধুত্ব শিকেয় তুলে এরই মধ্যে জন্মভূমির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘোষণা দিয়েছেন রিচার্লিসন। গত জুনে সিউলে এক প্রীতি ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৫-১ গোলে হারায় ব্রাজিল।







সে স্মৃতি ভুলে যেতে বলেছেন রিচার্লিসন, ‘তারা খুবই আগ্রাসী ও শক্তিশালী দল। তাদের বিপক্ষে ভুল করে পার পাওয়া যাবে না।’ টটেনহামে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রিচার্লিসনের ট্রেনিং পার্টনার সন। মাঠ এবং জিমে তো বটেই দু’জনকে নাকি







পরিবারসহ প্রায়ই একসঙ্গে হোটেলে খেতেও দেখা যায়। দু’জনের বন্ধুত্বের কথা খোদ টটেনহাম ক্লাব কর্তৃপক্ষই বলেছে একটি আর্টিকেলে। ‘হেউয়েং-মিন সনের আনন্দাশ্রু’ শিরোনামে ওই আর্টিকেলে টটেনহাম কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেনতাঙ্কুর







(টটেনহামের উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার) ছিটকে গেছেন। কিন্তু সন কাতারে বেশ আনন্দে সময় কাটাচ্ছেন। শেষ ষোলোতে সে যে প্রিয় বন্ধু রিচার্লিসনের সনের মুখোমুখি হবে!’ বিশ্বকাপের মঞ্চে ম্যাচের আগে ও পরে দুই বন্ধুর বেশ উপভোগ্য সময় কাটবে বলেও প্রত্যাশা ক্লাব কর্তৃপক্ষ।







তাদের এমন প্রত্যাশার কারণ, সন খুবই বন্ধুবৎসল। ২৪ নভেম্বর উরুগুয়ের বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচের পর বেনতাঙ্কুরের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে গিয়ে সাক্ষাৎ করে আসেন সন। তখন সনকে দেখে এগিয়ে এসেছিলেন লিভারপুলের উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার







ডারউইন নুনেজ। এডিনসন কাভানি, লুই সুয়ারেজদেরও হ্যালো দিয়ে আসেন কোরীয় তারকা। ঘানার বিপক্ষে দ্বিতীয় গ্রুপ ম্যাচে হেরে গেলেও পুরোনো গুরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ভোলেননি সন। ২০০৮ সালে সন যখন হামবুর্গের যুব দলে ছিলেন,







তখন জার্মান ক্লাবটির দায়িত্বে ছিলেন ঘানার বর্তমান কোচ ওটো ওডো। ৩-২ গোলে হেরে যাওয়ায় রীতিমতো কাঁদছিলেন সন। শিষ্যকে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গেই সান্ত্বনা দিতে দেখা গেছে ওটোকে। সবাই এখন অপেক্ষায় আছেন প্রিয় বন্ধু







রিচার্লিসনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সন কী করেন, সেটা দেখার জন্য। ব্রাজিলিয়ান এ তরুণের সঙ্গে সনের বন্ধুত্ব হওয়ার কারণটা বেশ আবেগের। সন আর দশজন কোরিয়ানের মতোই ভীষণ নিয়মানুবর্তী, সুশৃঙ্খল। সাধারণত ব্রাজিলিয়ানদের







মধ্যে এ দুই বৈশিষ্ট্যের ঘাটতি দেখা যায়। কিন্তু রিচার্লিসন ব্যতিক্রম। এত অর্থবিত্তের মালিক হওয়া সত্ত্বেও অতীত ভুলে যাননি তিনি। দক্ষিণ-পশ্চিম ব্রাজিলের এসপিরিতো সান্তো রাজ্যের নোভা ভেনেসিয়ার কুখ্যাত বস্তিতে অতি দরিদ্র এক







পরিবারে জন্ম রিচার্লিসনের। পাঁচ ভাই-বোনের সবার বড় তিনি। তাঁর পিতা ছিলেন পাথর কাটা শ্রমিক। মা ক্লিনারের কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আইসক্রিমও বিক্রি করতেন। মায়ের কষ্ট দেখে ছেলেবেলাতেই দায়িত্ব







নিতে শুরু করেন রিচার্লিসন। ওই বস্তির প্রায় সব কিশোর কাচা অর্থের লোভে পড়ে মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে পড়লেও রিচার্লিসন আইসক্রিম ও চকোলেট বিক্রি করে মাকে সহায়তা করতেন। তিনি ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে







তাঁদের দারিদ্র্যও বিদায় নিয়েছে। তার পিতা-মাতাকে এখন আর এসব কষ্টের কাজ করতে হয় না। তবে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার পরও রিচার্লিসন ওই বস্তির কথা ভুলে যাননি। ওই বস্তির পুরো বিদ্যুৎ ও পানির বিল তিনি এখনো বহন করেন।







সেখানে একশর বেশি পরিবারকে উন্নত বাসস্থান তৈরি করে দিয়েছেন, ওই এলাকায় স্কুল স্থাপন করেছেন। সাও পাওলোতে ভূমিহীনদের জন্য একটি আবাসন ও একটি ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য বেতনের দশ শতাংশ অর্থ তিনি দান করেন। এই







মহানুভবতার কারণেই এতো অল্প সময়ে রিচার্লিসনকে এতোটা পছন্দ করে ফেলেছেন সন। সেই অতি পছন্দের বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা আজ কেমন জমবে!