‘লা স্কালোনেটা’য় চড়ে আর্জেন্টিনার শিরোপার গাড়ি গিয়ে পৌঁছেছে তাদের ‘পুরনো শত্রু’ নেদারল্যান্ডসে। এই স্টেশনে গিয়ে বারবার সংশয় জাগে। গাড়ি থামিয়ে দেওয়ার হুমকি আসে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত আকাশি-সাদা ঝাণ্ডা উড়িয়ে পৌঁছে যায় পরের







স্টেশনে। এই কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে কাতারে এবারও নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। গত বছর কোপা আমেরিকা জেতার পর আর্জেন্টাইনরা বেজায় খুশি হয়েছিল। কারণ দীর্ঘ ২৮ বছর পর লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা তাদের শিরোপা







উপহার দেয়। তখনই আর্জেন্টিনায় একটি গাড়ি রং করে সাজানো হয়েছিল এবং নাম দেওয়া হয়েছিল ‘লা স্কালোনেটা’। বাসের সামনের দিকে দুজন লিওনেল—স্কালোনি ও মেসি, পেছনে খেলোয়াড়রা বসে। দুই লিওতে মিলে আলবিসেলেস্তেদের







বড় আসরে শিরোপা খরা মিটেছে, সুবাদে তাদের নিয়ে আরেকটা বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্নের আঁকিবুঁকি শুরু করে দেয় আর্জেন্টাইনরা। তাদের এমনই বিশ্বাস, ‘লা স্কালোনেটা’য় চড়ে কাতার জয় করবেন লিওনেল মেসি। কোপা জয়ে তাদের সেই







বিশ্বাস আরো পোক্ত হয়েছিল দীর্ঘ ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকায়। কাতারে এসে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবে ধাক্কা খেয়ে এই দলকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে দেখে সমর্থকরা আশাবাদী হয়ে ওঠে। লিওনেল স্কালোনি ‘এটাকে ফুটবল খেলা’ বলে বোঝানোর







চেষ্টা করলেও তারা বোঝে না। মেক্সিকো ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর পরও ৪৪ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন বলেছিলেন, ‘আমরা শুধুই মেক্সিকোর ম্যাচ জিতেছি। তাই বলে শিরোপা জিতে গেছি, এটা ভাববেন না। ’ তাঁর এসব কথা কানেই তোলে না
আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। তাদের ফুটবল আবেগ আর পাগলামিতে খেলাটা এ রকম সৌন্দর্য ছুঁয়েছে। সঙ্গে এটাও বলতে হবে, দলের দুদর্শায় তারাই থাকে পাশে। কাতারে স্টেডিয়ামে গিয়ে তারা ‘ফাটিয়ে’ সমর্থন করে প্রতিপক্ষের পিলে চমকে দিয়ে
ফেরে আর্জেন্টিনার জয় নিয়ে। আজ লুসাইল স্টেডিয়ামেও তাদের সেই সমর্থন লাগবে আর্জেন্টিনার ম্যাচ জিততে। এই ম্যাচটিকে কেউ সহজভাবে নিচ্ছে না। একদিকে আছে লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ রাঙানোর ব্যাপার, অন্যদিকে আছে
ফন ডাইকরা তাঁদের ক্যান্সার আক্রান্ত গুরুর চার দশকের কোচিং ক্যারিয়ারে সেরা উপহার দিতে চান। তাঁদের গুরু লুইস ফন হাল, ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে টাইব্রেকারে হেরে ফিরতে হয়েছিল এই ডাচ কোচকে।
স্বাভাবিকভাবেই ডাচ কোচের মনে জাগবে প্রতিশোধ স্পৃহা। তিনি সেটা গোপন করে বলেছেন অন্য কথা। মেসিকে এড়িয়ে ম্যাচ জেতার সুযোগের কথা ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। সে অনেক সুযোগ তৈরি করে এবং নিজেও
ফিনিশ করে। তবে নিয়ন্ত্রণ হারালে মেসি নিষ্ক্রিয় থাকে। এখানেই আমাদের সুযোগ আছে। ’ আট বছর আগে ব্রাজিলেও এই কোচ মাঠে একা করে ফেলেছিলেন লিওনেল মেসিকে। ক্ষুরধার মস্তিষ্কের এই কোচের কৌশলে আর্জেন্টাইন জাদুকর
নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিলেন মাঠে, সতীর্থদের সঙ্গে যোগসূত্রই হারিয়ে ফেলেছিলেন! কাতারেও নিশ্চিতভাবে লিওনেলের জন্য ‘বিশেষ উপহার’ সাজিয়ে রাখবেন ফন হাল। ডাগআউটে ৭১ বছর বয়সী ডাচ কোচের প্রতিপক্ষ ৪৪ বছর বয়সী লিওনেল স্কালোনি
প্রতিদ্বন্দ্বীকে বেশ শ্রদ্ধা করেন, ‘ফন হালের সঙ্গে লড়তে পেরে আমি গর্বিত। ফুটবলে তাঁর কী অবদান, সেটা সবাই জানে। অনেকে তাঁকে অনুসরণ করারও চেষ্টা করে। এটা আনন্দের যে তাঁর প্রতিপক্ষে আমি ডাগআউটে থাকব। ’ অভিজ্ঞতা কম
হলেও আর্জেন্টিনার সাফল্যের সুবাদে স্কালোনিরও সুখ্যাতি ছড়িয়েছে। অনুশীলনে নানা রকমের বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছেন এই আর্জেন্টাইন কোচ। তবে খানিকটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রোদ্রিগো দে পলের চোট নিয়ে। তাঁর সমস্যা
হচ্ছে হ্যামস্ট্রিংয়ে। অথচ মাঝমাঠে তিনি কোচের খুব ভরসার মানুষ, এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে ছিলেন মেসি-ওতামেন্দির মতো। তিনি খেলতে না পারলে বড় ক্ষতি হবে আর্জেন্টিনার। তবে দি মারিয়া সুস্থতা দলের জন্য বড় খুশির
খবরও বটে। এ রকম ঝাঁজালো ম্যাচের আগে দুই কোচই গোপন রাখবেন অনেক কিছু। তবে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের পাল্লাটা ভারী হলেও দুটি বিশ্বকাপে গিয়ে তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আর্জেন্টিনায়। বলা হয়, সত্তরের দশকটা
হতে পারত ইয়োহান ক্রুইফের নেদারল্যান্ডসের। ২০১৪ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে হারের আগে ১৯৭৮ বিশ্বকাপেও ডাচদের সোনালি ফুটবল শিরোপার শোভা পায়নি। সেটা হতে দেয়নি আর্জেন্টিনা। ক্রুইফের দলকে ফাইনাল হারিয়ে শিরোপা জেতে তারা। সেই শিরোপার বছরেই লিওনেল স্কালোনির জন্ম। ৪৪ বছর পর ‘লা স্কালোনেটা’য় চড়ে সেই আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে ডাচদের।