






আর্জেন্টিনার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সান্তিয়াগো মোন্তাগের ব্যাপারটাই আলাদা। তিনি আর্জেন্টিনার লা প্লাতা শহরের একটি স্টিল মিলে কাজ করেন। তা ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। এসবের পাশাপাশি শখের সাংবাদিকতা







আর লেখালেখিও চালিয়ে যাচ্ছেন। বিয়ে–থা করেননি। মা–বাবাও নেই। সময় পেলেই ছুটে বেড়ান বিশ্বের নানা প্রান্তে। বলেন, ‘বিশ্বের সবাই আমার ভাই।’ এই সান্তিয়াগো মোন্তাগ এসেছিলেন বাংলাদেশে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী







হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালের দিনই হোয়্যাটসঅ্যাপে মেসেজ করে রেখেছিলাম যে সাক্ষাৎকার নিতে চাই। তিন দিন পর বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় উত্তর এল, ‘এখন কথা বলা যাবে?’ সঙ্গে সঙ্গে লিখলাম,







‘অবশ্যই।’ সেই কথোপকথনের উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো এখানে—আপনি এখন কোথায়?এই জায়গার নাম সাভার। মূল শহর থেকে একটু দূরে। সাভারে কী করছেন?এখানে একটা সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)







আছে। সেখানে ছবি তুলব। আমি ২৪ ডিসেম্বর চলে যাব। এবারই প্রথম ঢাকায় আসা। আর কোনো দিন আসা হবে কি না, কে জানে! এই সময়ের ভেতর যতটা পারা যায় ঘুরে ঘুরে দেখার চেষ্টা করছি। এখানকার মানুষ আর সংস্কৃতি বুঝে ওঠার চেষ্টা







করছি। একটা দেশের মানুষকে বোঝার জন্য সেখানকার তরুণদের সঙ্গে সময় কাটানোর বিকল্প নেই। এটা বলে বোঝানো যাবে না। কী যে একটা অবস্থা! আমার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা উপহার দিল ঢাকা শহর। এখানকার উত্তেজনা







আর্জেন্টিনার চেয়ে কম নয়। ২০ হাজার মানুষ একসঙ্গে। প্রচণ্ড আওয়াজ। ইউ পিপল আর ক্রেজি। অ্যাবসলিউটলি ক্রেজি! আর্জেন্টিনা নিয়ে আমি এখানকার এনার্জি আর আবেগ দেখে ভড়কে গিয়েছি। এটা কীভাবে হলো?







আমার মনে হয় ম্যারাডোনা যখন ম্যারাডোনা হয়ে উঠছেন, তখন থেকে। বিশেষ করে ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার হাতে বিশ্বকাপ ওঠার পর থেকে। তিনিও তো আমাদের মতো আবেগ আর উত্তেজনায় ভরপুর একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে
বোধ হয় এই অঞ্চলের মানুষ নিজেদের মেলাতে পেরেছেন। যাহোক, ঢাকা থেকে কী নিয়ে যাচ্ছেন?স্মৃতি। অনেক অনেক স্মৃতি, যেগুলো পুরোনো অনেক স্মৃতিকে সরিয়ে দাপটের সঙ্গে জায়গা করে নেবে আর স্মৃতির রাজ্যে রাজত্ব করবে। ঢাকা থেকে
আর্জেন্টিনার জন্য নিয়ে যাচ্ছি প্লেনভর্তি ভালোবাসা। এটা অদ্ভুত, এটা বলে বোঝানো যাবে না। আমি যদি আমার দেশের সবাইকে দেখাতে পারতাম!আপনাদের জাতীয় মাছ (ইলিশ) আমার খুব ভালো লেগেছে। এত ঘ্রাণ! তবে অনেক কাঁটা। আমি
তো এখানে এসে হাত দিয়ে খাওয়া শিখে গেছি। কয়েক পদের মিষ্টি খেয়েছি। তবে নাম জিজ্ঞেস করবেন না। বিরিয়ানি খেয়েছি। আর ডাল, আলু, সবজি দেওয়া এক প্রকার হলুদ ভাত (খিচুড়ি) খেয়েছি। ইন্টারেস্টিং!ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়
খেলা দেখলেন। পানিপুরি, ভেলপুরি, ফুচকা, চটপটি—এ রকম স্ট্রিট ফুড চেখে দেখেছেন?না। আমার এক বন্ধু বলেছিল, আমি যা-ই খাই না কেন, যেন মিনারেল ওয়াটার খাই। বাইরের পানি না খাই। এ জন্য পানি দিয়ে তৈরি স্ট্রিট ফুড কম খেয়ছি।
পড়িনি আবার! ভীষণ যানজট। তবে চালকেরা দারুণ, বলতেই হবে। হা হা হা। তাঁরা আমাকে বলেন, ‘ব্রাদার, কোনো ভয় নাই।’এখানকার মানুষের মন। খুবই আন্তরিক। এত আবেগপ্রবণ মানুষ বোধ হয় কমই আছে। ভারতে আর এখানে বেশি।
তবে এখানে সবচেয়ে বেশি। এখানকার খাবারও ভালো লেগেছে। আপনারা খাবারে প্রচুর টক, মিষ্টি, ঝাল খান। সবকিছু স্পাইসি পছন্দ করেন। তবে আমার জন্য একটু বেশি মশলাদার মনে হয়েছে। আর এখানকার মানুষ এত ছবি তোলে! আমার সঙ্গে এত সেলফি তুলেছে সবাই, আমার মনে হয়েছে, আমিই মেসি!
আবার আসবেন। এরপর আরও সময় নিয়ে আসবেন। সারা দেশ ঘুরবেন।হা হা। দেখা যাক… এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের সব মানুষ, বিশেষ করে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের ভালোবাসা জানাতে চাই। আপনারা অবিশ্বাস্য!