






লিওনেল মেসি যেদিন আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে অভিষিক্ত হন ২০০৬ সালে, সেদিন তার সতীর্থ ছিলেন লিওনেল স্কালোনি। মাঝে যখন বিশ্বকাপ জিততে পারেননি, দু’বার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও জিততে ব্যর্থ হলেন এবং ২০১৮







বিশ্বকাপ থেকেও যখন দ্রুত বিদায় নিয়েছিলো আর্জেন্টিনা, তখন অবসরই ঘোষণা করে ফেলেন লিওনেল মেসি।আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে মেসি যেন অবসর না নেন, ঘোষিত অবসর ভেঙে যেন আবার ফিরে আসেন- সে আকুতি চললো ভক্তদের







মধ্যে। আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে ভক্তদের মধ্যে একটা কথাই উচ্চারিত হয়েছে, ‘ফিরে এসো লিও’। আর্জেন্টিনার সরকার প্রধান পর্যন্ত দেখা করে মেসিকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে পারেননি।কিন্তু কী জাদু জানেন লিওনেল স্কালোনি!







তিনি মেসির সঙ্গে দেখা করলেন। কিছু বোঝালেন হয়তো। এরপরই পরিস্থিতি পাল্টে গেলো। অবসর ভেঙে ফিরে এলেন মেসি। এরপরের গল্প তো সবারই জানা।মেসির অভিষেকে সতীর্থ, অবসর ভেঙে ফিরিয়ে আনা এবং সর্বশেষ বিশ্বকাপ জয়ের মূল







কারিগর হিসেবে, নেপথ্য নায়ক হিসেবে নিজেকে হাজির করা- লিওনেল মেসির পুরো ক্যারিয়ারের সঙ্গেই যেন আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছেন লিওনেল স্কালোনি।ফুটবলার হিসেবে স্কালোনি ছিলেন রাইট ব্যাক বা রাইট মিডফিল্ডার। জীবনের বেশির







ভাগ সময় কাটিয়েছেন স্পেনের দেপোর্তিভো লা করুনা ক্লাবের হয়ে খেলে। নিজে খেলার সময় দেপোর্তিভো লা করুনা ছাড়াও লাজিও এবং আটলান্টার হয়েও খেলেছেন স্কালোনি।তিনটি ক্লাবের হয়ে লা লিগায় ১২ মৌসুমে মোট ২৫৮টি ম্যাচ তিনি খেলেছেন।







গোল করেছেন ১৫টি। খেলোয়াড় হিসাবে ২০০৬-এর বিশ্বকাপপে আর্জেন্টিনা দলেরও অংশ ছিলেন তিনি।ফুটবলার হিসাবে স্কালোনিকে সফল বলা চলে কি না, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে কোচ হিসাবে তিনি যে সফল, তা মেনে নিতে বাধ্য এখন সবাই।
অন্তত বিশ্বকাপ জয়ের পর।২০১৬-এর ১১ অক্টোবর সেভিয়া এফসিতে কোচ হোর্হে সাম্পাওলির দলের সহকারী হয়ে যোগ দেন স্কালোনি। ২০১৭’র জুনে সাম্পাওলি আর্জেন্টিনার কোচ নিযুক্ত হলে স্কালোনিকে আবার তার সহকারী হিসাবে নিয়োগ করা হয়।
২০১৮ বিশ্বকাপে বিপর্যয়ের পর তাকেই অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কোনো ক্লাবে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা না থাকা স্কালোনিকে দায়িত্ব দেওয়ার সময় সবাই অবাক হয়েছিলেন। স্কালোনির ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন
অনেকে। কিন্তু সবার মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন স্কালোনি। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এবার জিতলেন বিশ্বকাপ।রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ব্যর্থতার পর স্কালোনি এবং পাবলো আইমারকে বছরের শেষ পর্যন্ত সাময়িক কোচ হিসেবে
নিয়োগ দেয়া হয়। স্কালোনির প্রশিক্ষণে ২০২১ সালে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকা জয় করে আর্জেন্টিনা। ২৮ বছর পরে সেবারই প্রথম আর্জেন্টিনা এই ট্রফি জয় করে।সমালোচনায় তিনি কান দেন না বলে জানিয়েছিলেন স্কালোনি।
বলেছিলেন, ‘যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আর্জেন্টিনার কোচ হিসাবে তখন দল ছাড়া আমার মাথায় কিছু ছিল না। আমি আমার কাজ করেছি। নিজের সেরাটা দিয়েছি। কোনও সমালোচনায় আমার কিছু যায় আসে না।’
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারের পর থেকে ছন্দে ফেরে আর্জেন্টিনা। ফাইনালেও সেই ছন্দ ধরে রাখলেন মেসিরা। স্কালোনির আশা ছিল, বিশ্বকাপ জিতেই মাঠ ছাড়বে তার দল। তিনি বলেন, ‘আশা করছি ওরা ওদের প্রাপ্য আনন্দ পাবে।
ফুটবলাররা নিজেদের সবটা দিয়েছে। আশা করছি, বিশ্বকাপ জিতেই মাঠ ছাড়বো। সবাইকে গর্বিত করতে চাই।’ সেটাই হল। মেসি জিতলেন। জেতালেন স্কালোনি।