গল্প, পর্ব:১ “জানো বাবাই তুমি যখন অফিসে থাকো তখন মা আর রাফি আঙ্কেল দরজা বন্ধ করে কি যেন করে। আমি আজকে যখন স্কুল থেকে এসে রুমের দরজা ধাক্কা দেই তখন দেখি মমের শরীরে কাপড় নেই।







আর আঙ্কেলেরটাও নেই। আচ্ছা বাবাই দরজা বন্ধ করে কাপড় খুলে কি করে? যার কারণে মম আমাকে রুমে যেতে দেয় না। বলো না বাবাই? হঠাৎ রাইসার কথা শুনে আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে। বুকের ভেতরটা অজানা ব্যাথায় কুর্করে ওঠছে। রাইসার প্রশ্নের কোন উওর আমার জানা নেই।







বাবা হয়ে মেয়েকে তার মায়ের অবৈধ সম্পর্কের কথা ক্যামনে বলি? যে কথাকে সাতবছর ভালোবেসে বিয়ে করলাম সে কথা আমার সাথে এভাবে প্রতারণা করতে পারলো? চোখের কার্ণিশ বেয়ে এক ফোটা অশ্রু মাটিতে পড়ে টপ করে ওঠলো।







—বাবা তুমি কাঁদছো কেন? কেঁদো না বাবাই। ও বাবাই। আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি? আচ্ছা বাবাই আমি আর তোমার কাছে এসব জানতে চাইবো না। আচ্ছা বাবাই তুমি মমকে এ কথা বলো না কেমন?







–আচ্ছা ঠিক আছে মা। তুমি বাহিরের কাউকে বলো না কেমন। —হু, বাবা আমাকে কুলে নিবে? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। –হ্যাঁ মা, তারপর রাইসাকে কুলে নিতেই দেখতে পারলাম পাঁচ আঙ্গুলের দাগ রাইসার গালে বসে আছে। রাইসার গালে চড়ের দাগ দেখে মনে হচ্ছে দাগটা আমার কলিজায় দেখা যাচ্ছে। মন চাচ্ছে কথাকে কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলি। রাইসা কুলে চড়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে দু’গালে চুমু দিয়ে বললো’







—আমার লক্ষী বাবাই, আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো? আমি রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম। –মা’রে মা হারিয়ে মা পেয়েছি তোকে ছেড়ে যাবো কেমনে। —বাবাই মা’কে বকা দিয়ো না। মা’কে তুমি ভালো বানিয়ে ফেলো। আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসি মমকেও ততটাই ভালোবাসি। মমকে ছাড়াও আমি বাঁচবো না।







আমি মেয়ের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম। এদিকে এই অসময়ে কথা শাওয়ার নিয়ে বের হলেই বললাম। –এ অসময়ে শাওয়ার নিলে? (আমি) —আর বলো না খুব গরম লাগতেছিল। তাই শাওয়ার নিয়ে আসলাম। (কথা)







–মানে কী? এ শীতের দিনেও তোমার গরম লাগে। কিন্তু উত্তরে কথা কিছু বললো না। অপরাধীর মতো মাথাটা নিচু করে ফেললো। আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না এ কথা আর আমার আগের কথা নয়।







রাত্রে বেলা শুয়ে আছি কথা মাথার চুল আচঁড়াচ্ছে। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো কথার ঠিক মুখটাতে এসে পড়ছে। খুব সুন্দর লাগছে কথাকে। মনে হচ্ছে অষ্টাদশী কোন যুবতী তার চুলগুলো মেলে দিয়েছে। এতো সুন্দর মানুষ হয় কীভাবে। তখনি হঠাৎ রাইসার কথাগুলো মনে পড়ে গেল। তাই আমি মাথা ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লাম।







কিছুক্ষণ পর কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। কিন্তু এই স্পর্শে আজ কোন ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছি না। তাই হাতটা সরিয়ে দিলাম। কথা আবারো হাত দিলো। আমি আবারো হাতটা সরিয়ে দিলাম।
এবার কথা আমাকে টান দিয়ে তার বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো।







—আচ্ছা আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি? আমাকে তোমার ভালো লাগে না? বারবার হাতটা সরিয়ে দিচ্ছো। একটু বুকে নাও না? প্রথম যেদিন শক্ত করে ঝাঁপটে ধরেছিলে সেদিনের মতো। আমি কথার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম। –মাথাটা কেমন যেন করছে। প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও। —কি বলছো এসব? আগে বলবে তো। দাও তোমার মাথাটা আমার বুকে দাও। বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।







–কথা প্লিজ ডিস্টার্ব করো না। সত্যি বলছি আমার ভালো লাগছে না। —হুম বলতে পারো না, আমাকে ভালো লাগে না। আমার কি স্বাদ আল্লাত কিছুই নেই। আমি তোমার কাছে ব্যবহার করা টিস্যু হয়ে গেছি। কিন্তু রাফি ভাইয়া কি বলে জানো?







আমাকে দেখে তার নাকি মনে হয় আমার বিয়েই হয়নি। –আচ্ছা তাই বুঝি তাহলে যাও তাকে বলো তোমাকে বিয়ে করতে। কথাটা শুনে কথা আর কিছু না বলে ওঠে চলে গেলো। আর আমি ওপাশ ফিরে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম কেউ বিছানায় ফ্যাঁত ফ্যাঁতিরে কাঁদছে।







কথার কান্না শুনে মনে হচ্ছে মেয়েদের এজন্যই কালনাগিনী বলা হয়। আমার কি অপরাধ ছিলো? যার জন্য মেয়ে রেখে অন্য ছেলের সাথে। ছিঃ এসব ভাবতেও কষ্ট লাগে। বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। হৃদয়ে র’ক্তক্ষরণ হচ্ছে।







যে কথা আমি রাগ করবো ভেবে ক্যাম্পাসে অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলতো না। আজ সেই কথা মেয়ে রেখে অবাধ-মেলামেশা করে পরপু’রুষের সাথে। আর এখন আমার কাছে সতি-সাধ্বী সাজছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই। সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি আমি কথার বুকে। আমার মাথাটা কথা তার বুকে ছেপে ধরে রেখেছে। আমি কথাকে সরাতে চেয়েও পারছি না।







কথার হাতটা সরাতে চেয়ে বুঝতে পারলাম কথা জেগে আছে। আর আস্তে আস্তে কথার নিঃশ্বাম ভারী হয়ে আসছে। আমি যেন অজানা কোন মুহে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। শত চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছি না। তারপর কথা তার ঠোঁঠ জোড়া আমার ঠোঁঠে যখনি মিলিয়ে দিবে ঠিক সেই সময় রাইসার কথাগুলো মনে পড়ে গেলো।







আর সাথে সাথেই কথাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। কথা হয়তো এমন’টা আমার কাছে আশা করেনি। কথা বিছানা থেকে উঠে, বেলকণীতে গিয়ে দাঁড়ালো। কথার চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। রাতে কাজল দিয়েছিলো। সে কাজল যেন চোখের পানিতে জীবন্ত হয়ে উঠছে। কথার কান্না আমার চোখ এড়ালো না। বিয়ের পর কথাকে এ নিয়ে চারবার কাঁদতে দেখলাম।







প্রথম দেখেছিলাম বাসর রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। তারপর দেখেছিলাম, রাইসা যেদিন কথার পেটে আসে। তারপর রাইসা যখন আমাদের ঘর আলোকিত করে এ পৃথিবীতে আসলো। আর আজকে। কিন্তু সেদিনের চোখের পানির সাথে আজকের চোখের পানি টা কোন ভাবেই মিলছে না। আজকের চোখের পানিটা মনে হচ্ছে ছলনার ধুম্রজাল!







তারপর কথা চোখের পানি মুছে কিচেনে চলে গেল। ব্রেকফাস্ট রেডি করে যখন টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছে, ঠিক তখনি কথার শাড়িটা সরে গিয়ে নাভিটা একটু বের হয়ে আসে। আমি হাত বাড়িয়ে ঠিক করে দিতে গিয়েও হাতটা ফিরিয়ে আনলাম।







কেননা কথাকে স্পর্শ করতেও এখন আমার ঘৃণা লাগে তবুও দিনশেষে মানুষটাকেই আমি ভালোবাসি বড্ডবেশি ভালোবাসি। সকালে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে গিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়।







কথাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারা আমার জন্য সম্ভব না। এছাড়া রাইসারো তো একটা ফিউচার আছে। মনে মনে স্থির করে নিলাম। কথাকে ভালোবাসা দিয়ে শুদ্ধ করে নিবো। তাই অফিস থেকে বের হয়ে কথার পছন্দের এক পাতা কালো রঙের টিপ সাথে, বকুলের মালা, কাঁচের চুড়ি কিনে রওয়ানা দিলাম বাসায়।







বাসায় যেতে যেতে যেতে ভাবলাম কালো টিপ নীল চুড়ি সাথে খোঁপাতে কথাকে আজ অষ্টাদশী তরুণী লাগবে। ভাবতে ভাবতে একদম বাসার সামনে এসে পড়ি। তারপর বাসায় এসে দরজা ধাক্কা দিতেই আমার হাতের ফুলগুলো পড়ে যায়। রাফি আর কথা.. চলবে… দ্বিতীয় পর্বের জেন্য আমাদের পেজটি ফলো করে রাখুন!