দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছাগল চুরির অপবাদে শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে গাছে বেঁধে পিটিয়ে ও পায়ের তালুতে সূচ ফুটিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়েছে। একই ঘটনায় আরো দুই কিশোর দুইদিন ধরে নিখোঁজ।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১ মে) দুপুরে ওই উপজেলার ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর বুদ্ধিজীবীর মোড় নামক স্থানে। রোববার দুপুরে নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক স্কুলশিক্ষকসহ আটজনের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক অভিযোগ করা হয়েছে।







অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ত্রিমোহনী স্লুইসগেট এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন, রাকিবুল ইসলাম ও নিশাতকে পূর্ব জাফরপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় কৌশলে ডেকে রামভদ্রপুর গ্রামের বুদ্ধিজীবী মোড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গ্রামের রূপচাঁদের ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে স্কুলশিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু, মো. শাকিব, মো. শিপন, রেজাউল, আফজাল হোসেন, মো. শুভ, হৃদয় ও নূরনবীসহ কয়েকজন ব্যক্তি ওই তিন কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রড, পাইপ ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।







চুরির স্বীকারোক্তি নিতে তাদের পায়ের তালুতে ইনজেকশনের সূচ ফুটিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতন শেষে বাবু মাস্টার ও তার সহযোগীরা আহত তিন কিশোরকে ছাগল চোর আখ্যা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করলে সেখান থেকে ওই তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে প্রতিবন্ধী কিশোর রাকিবুল ও শামীম হোসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। আরেক কিশোর নিশাত নিজ বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় আছে। এদিকে নির্যাতনের ভয়ে পালানো আরো দুই কিশোর নাঈম ও নূর আলমকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।







নির্যাতনের শিকার শামীম হোসেন ও রাকিবুল বলে, হঠাৎ করেই বাবু মাস্টারসহ তাদের লোকজন আমাদের মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পরে ছাগল চুরির মিথ্যা অপবাদে নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে চুরির অপবাদ স্বীকার করতে হয়েছে আমাদের। অথচ আমরা চুরি সম্পর্কে কিছুই জানি না। পরে তারা পাশের কলাবাগানে নিয়ে গলায় চাকু ধরে আমাদের পায়ের তালুতে ইনজেকশনের সূচ ফুটিয়ে দেয়।







রাকিবুলের বাবা মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে চুরি করেনি। পূর্বশত্রুতার জেরে মিথ্যা অপবাধে তাকে চোর সাজিয়ে পৈশাচিক নির্যাচন করেছে বাবু মাস্টার ও তার লোকজন।
নিখোঁজ নাইমের মা শাহানুর বানু বলেন, বাবু মাস্টার ও তার লোকজন শনিবার ওই তিন কিশোরকে তুলে নেয়ার পর থেকে আমার ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ছেলের কিছু হলে বাবু মাস্টার ও তার লোকজন দায়ী থাকবে।







অপরদিকে ঘটনা রাতেই সালিশ বসে গ্রামের আমিন ড্রাইভারের বাড়িতে। সেখানে নিখোঁজ দুই কিশোরকে তিনদিনের মধ্যে হাজির হওয়ার করার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দেন মাতব্বররা। এতে ব্যর্থ হলে জরিমানা হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সালিশ শেষে ওই রাতেই আহত নিশাতের নানির একটি গাভী এবং নিখোঁজ নূর আলমের বাড়ির থেকে একটি অটোভ্যান নিয়ে যায় মাতব্বরের লোকজন।







এ বিষয়ে শিবনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, নির্যাতনের শিকার কিশোরদের নিজ নিজ অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত স্কুলশিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার বলেন, মারধর করা ভুল হয়ে গেছে। আমি সার্ভিস করি- আমার যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।







ফুলবাড়ী থানার ওসি ফখরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।