গুলশান-২ এর একটি ফ্ল্যাট থেকে গতকাল সোমবার মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামে এক তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করেন।







এরপরই গণমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন নুসরাত জাহান। এক ভিডিও সাক্ষাতকারে ছোটবোন মুনিয়ার সঙ্গে তার শেষ কথোপকথন ও বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির সঙ্গে মুনিয়ার প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তারিত জানান তিনি।







আত্মহত্যার দিন সকালে বিপদের আভাস দিয়েছিলেন মুনিয়া- একথা উল্লেখ করে নুসরাত জানান বলেন, ‘সোমবারে সকাল বেলায় কথা হয়েছে লাস্ট। সোমবার যে কথা হয়েছে, আমাকে ফোন করে, ওর ফোনের কান্নায় আমার ঘুম ভাঙে, ও ফোন দিয়া বলে আমাকে ধোকা দিয়েছে, আপু আনভীর আমাকে ধোকা দিছে।







সে আমায় বলে আপু আমি অনেক বিপদে আছি, অনেক বিপদে আছি তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। আমি তাকে বুঝাই, বলি তুমি একটু রেডি হও, তোমাকে আপু এসে নিয়ে যাচ্ছি। কুমিল্লা নিয়া আসব, পরে বলে যে আমি তো তোমার সাথে অভিমান করে চলে আসছি, এখন কীভাবে আসব।







ওর লজ্জা কাজ করছিল তো আমি ওকে নরমাল করি। ১১টার দিকে সে আমায় কল করে বলে আপু আমার অনেক বিপদ তুমি কখন আসবা যেকোনো সময় কিছু একটা হয়ে যাবে আপু।’







তিনি আরও বলেন, ‘যাওয়ার পর ওরে অনেকবার কল করেছি ও ধরেনি। সেখানে গিয়াও ওরে যখন পাচ্ছিলাম না তখন বাসার মালিকের ওয়াইফকে কল করি। সে জানায় এক্সট্রা কোনো চাবি নাই। পরে মালিক আমাকে পরামর্শ দেন মিস্ত্রি এনে তালা ভাঙার।







যখন তালা ভাঙতেছি তখনো ওর কোনো আলাপ না দেখে আমরা ভয় পাই। ও কোনো রেসপন্স করতেছে না, আমরা ভয় পাচ্ছি কি হচ্ছে কি হচ্ছে, তালা ভেঙে দেখি ও ঝুলন্ত। এরপর পুলিশকে কল করি, ইফতারের পর পুলিশ আসে।’







নুসরাত বলেন, ‘পুলিশ আসলে উপরে যাই, যাওয়ার পর দেখলাম ও ঝুলন্ত অবস্থায় আছে কিন্তু তার পা বিছানায়। পা দুটা হালকা বিছানায় বাঁকা। বিছানা খুব পরিপাটি ছিল, বিছানায় যদি সেই শুইতো বা উঠে দাঁড়াতো একটু সিন্ড্রম, মানে খুব পরিপাটি ছিল। একটা সিট ছিল সেটাও পরিপাটি ছিল। পরে পুলিশ ওরে নিচে নামায়।’







মুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি জানিয়েছে বড় বোন বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। আমি পাঁচদিন কথাও বলি নাই। সে ঢাকায় যাবে, সে বাসা নেবে। ইন্টার পরীক্ষাও দিবে আমাকে খুশি করতে বলছে। আনভীর ওকে বিয়েও করবে।







বলতেছে আপু এটা কাউকে বলা যাবে না, আনভীর নিষেধ করছে। আমি বলছি এটাতো আমি রাজি না, এটা হয় না। এটা কীভাবে হবে? বলে যে না কিছুদিন গোপন রাখতে হবে বলছে, বিয়ে করে। বিয়ে করে পরে বাইরে নিয়ে স্যাটেল করবে। আমি পারিনি… আনভীরকে সে অনেক ভালোবাসতো।’







মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ সহযোহিতা করেছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নুসরাত বলেন, ‘পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করতে বাধ্য ছিল। সব কিছু প্রমাণ ছিল ওই বাসায়। আমার বোনের সাথে ছবি, ও প্রতিনিয়ত ওই বাসায় যেত। তাকে নিয়ে অগণিত লেখা, ছবি আঁকতো, সব কিছু হাতে। তার মোবাইলে অনেক কিছু আছে, যা পুলিশের কাছে। ডায়েরিতে সব লিখেছে কী কী করছে।’







অভিনেতা বাপ্পির সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নুসরাত বলেন, ‘এগুলো কেউ রটাচ্ছে, মিথ্যা কোনো কথা। পরিচয় মানুষের থাকতেই পারে, আপনার সাথে আমার থাকতে পারে, আরেকজনের সাথে থাকতে পারে। এর মানে হচ্ছে এটা না।







আমার কথা হচ্ছে আমার বোন চলে গেছে এখন ওর চরিত্র নিয়ে অনেক কিছু আসবে আমি এটা জানি। আমার বোন মারা গেছে, আমার সন্তান মারা গেছে। এখানে তার চরিত্র কি ছিল, তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রমাণ করুক কেউ, ওর চরিত্র খারাপ ছিল। ও মরে গেছে। এ রমজান মাসে ওরে মাইরা ফেলছে, না হয় মরে গেছে, না হয় বাধ্য করছে। যেটাই করুক ওইটারই বিচার চাই। যেই করেছে আমি চাই বিচার হোক। আমি আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে বলতে চাই।’







আমি নাকি আনভীরকে ফাঁসাতে মুনিয়াকে ব্যবহার করেছি- এ কথা উল্লেখ করে নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমায় একটা নাম্বার থেকে ফোন করে টাকার জন্য। আমাকে অনেক নোংরা কথা বলেছে। আমি নাকি ওরে দিয়া ব্যবসা…। ফোনে বলে এখন মিডিয়া করতেছি, কথা বলতেছি এগুলো টাকা নেওয়ার জন্য করতেছি। বোনকে দিয়ে বিজনেস করানোর জন্য আনভীরকে ফাঁসাচ্ছি। এরপর ফোন কেটে দিছি।’






