






ও আমাকে প্রতিদিন মা’রধর করতো। পাটার পুতা দিয়ে আ’ঘাত করতো, যাতে কেউ মা’রধরের আওয়াজ না পায়। আমা’র সারা শরীর থেঁতলে গেছে ওই আ’ঘাতে। আ’ঘাতের যন্ত্র’ণা সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আত্মহ’ত্যার। কিন্তু সেই সুযোগও পাইনি। আমি সেখান থেকে জীবিত ফিরে আসতে পারবো সেই আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।’







বিয়ের এক মাসের মধ্যে প্রতারক স্বামীর ১৫ দিনের ব’ন্দিদশা থেকে ফিরে এসে এভাবেই তার ওপর নি’র্যাতনের বর্ণনা দিলেন মানিকগঞ্জ জে’লা জজ কোর্টের আইনজীবী কাম’রুন্নাহার সেতু। ব’ন্দিদশা থেকে ফিরে এসে সোমবার রাতে মানিকগঞ্জ সদর থা’নায় প্রতারক স্বামীর বি’রুদ্ধে মা’মলা করেন তিনি।মা’মলার এজাহারে কাম’রুন্নাহার সেতু উল্লেখ করেন, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজে’লার আজিমনগরে গ্রামের মো. শাওন মিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর ‘গত ৯ সেপ্টেম্বর শাওন তাকে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেন। মানসম্মানের ভ’য়ে, বিয়ের বিষয়টি কাউকে কিছু বলেননি তিনি।







‘গত ১৭ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জজ কোর্ট থেকে কথা আছে বলে শাওন তাকে তার প্রাইভেট’কারে উঠিয়ে নবীনগর কহিনুর গেটের তুনু হাজীর ছয়তলা বাড়ির চারতলার একটি কক্ষে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে স্ত্রী’ হিসেবে রাখে। সেখানে প্রথম দুদিন তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তৃতীয় দিন তার মানিকগঞ্জ ডাকঘরে থাকা কয়েকটি হিসাব থেকে তাকে টাকা উঠিয়ে দিতে বলেন। এজন্য তাকে অ’স্ত্র দিয়ে ভ’য় দেখানো হয়। অ’স্ত্রের ভ’য়ে তিনি তাকে তিন দফায় ১৪ লাখ টাকা তুলে দিতে বাধ্য হন।







এর দুদিন পর শাওন তার কাছে আরও টাকা চান। তার কাছে আর সঞ্চিত টাকা নেই জানালে সে তাকে তার নামে থাকা জমি লিখে দিতে বলেন। জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর শুরু হয় অমানবিক নি’র্যাতন। তার কাছ থেকে নিয়ে নেয় মোবাইল ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স। বিবস্ত্র করে ন’গ্ন ভিডিও ধারণ করে এবং তার শেখানো কথা বলিয়ে তারও ভিডিও রেকর্ড করা হয়। সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। স্বামী শাওন সারাদিন তাকে কক্ষে আ’ট’কে রেখে মা’রধর করতে থাকেন। ঘরের মধ্যে থাকা পুতার দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে আ’ঘাত করে। এতে তার মুখমণ্ডলসহ বিভিন্ন অংশ থেঁতলে যায়।







সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর দিবাগত রাতে তাকে হ’ত্যার হুমকি দেন স্বামী। জানে বাঁচতে তিনি তার কক্ষের জানালা খুলে এক প্রতিবেশীকে রাতে না ঘুমিয়ে একটু সজাগ থাকতে বলেন। তাকে বাঁ’চানোর আকুতি জানান। এরপর রাত ২টার দিকে তাকে মা’রধর শুরু করেন। জবাই করতে রান্নাঘর থেকে বঁটি আনতে গেলে চি’ৎকার শুরু করেন সেতু। তার চি’ৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে।এসময় শাওন প্রতিবেশীদের জানান, স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে বাইরের লোকের কোনো কথা থাকতে পারে না। তার শরীরে আ’ঘাতের চিহ্ন এবং চি’ৎকারে বাড়ির মালিক এসে তাকে সেখান থেকে উ’দ্ধার করে পৃথক একটি কক্ষে রাখেন। পরদিন বাবার বাড়িতে দিয়ে আসার কথা বলে তাকে অ’স্ত্রের ভ’য় দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে যান শাওন। চিকিৎসার নামে একটি হাসপাতালে নিয়ে ইনজেকশন দিয়ে মে’রে ফেলার পরিকল্পনা করেন। এটা বুঝতে পেরে সেতু সেখান থেকে চলে আসতে চাইলে তাকে সেখানেই মা’রধর করা হয়।







এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পু’লিশকে খবর দিলে সেখান থেকে শাওন পালিয়ে যায়। এরপর সেতু ঢাকার উত্তরায় তার এক পরিচিতের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেন। সোমবার রাতে তিনি মানিকগঞ্জ সদর থা’নায় এসে ১৫ দিনের বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দেন।কাম’রুন্নাহার সেতু আরও বলেন, শাওন একজন প্রতারক। তার কাজই হলো প্রতারণা করা। ‘প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়াই ওর কাজ। ও যে কত নারীর জীবন নষ্ট করেছে, কত মানুষকে পথে বসিয়েছে- তা ও নিজেও হয়তো বলতে পারবে না।’ও প্রথমে নারীদের সঙ্গে প্রে’মের স’ম্পর্ক গড়ে তোলে। নানা প্রলো’ভনে ফেলে তাদের অন্তরঙ্গ মেলামেশার ভিডিও ধারণ করে। নিয়ে নেয় মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড কিংবা অন্য কোনো পরিচয়পত্র। তারপর তাকে জি’ম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। না দিলেই শুরু হয় অমানবিক নি’র্যাতন।







এসব অ’প’রাধ ঢাকতে সে পু’লিশসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মক’র্তা ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। নিজেকে অনেক বিত্তশালী ও বড় মাপের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে খুব সহ’জেই মিশে যায় তাদের সঙ্গে। ব্যবহার করে প্রাইভেট’কার। রাজধানীর মতিঝিলে জনি টাওয়ারে নাকি তার ফ্ল্যাট আছে।জি’ম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে মানিকগঞ্জে আসার পর অ্যাডভোকেট কাম’রুন্নাহর সেতু আরও জানান, তার বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজে’লার জাগীর ইউনিয়নের ঢাকুলী গ্রামে। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তিনি উচ্চ’মাধ্যমিক শ্রেণিপড়ুয়া ছে’লে মোরশেদকে নিয়ে তিনি তার বাবার বাড়ি থাকেন।







তিনি ২০১৩ ও ২০১৪ সালে মানিকগঞ্জ জে’লা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সদস্য হন। স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগে শাওনের সঙ্গে তার প্রে’মের স’ম্পর্ক গড়ে ওঠে।কাম’রুন্নাহার সেতুর বাবা মো. সফিউদ্দিন বলেন, তার মে’য়ে নি’খোঁজ হওয়ার পর শাওন তার কাছে ফোন করে তার মে’য়েকে দিয়ে ৫ লাখ টাকা চায়। না দিলে তাকে হ’ত্যার হুমকি দেয়। তিনি গত ৩ নভেম্বর মানিকগঞ্জ থা’নায় শাওনের বি’রুদ্ধে একটি অ’পহ’রণ মা’মলা করেন।মানিকগঞ্জ সদর থা’না পু’লিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি ত’দন্ত) মো. হানিফ সরকার বলেন, ওই নারী আইনজীবীকে তার বাবার করা অ’পহ’রণ মা’মলায় উ’দ্ধার দেখানো হয়েছে। বিকেলে নি’র্যাতনের শিকার ওই আইনজীবী আ’দালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানব’ন্দি দিয়েছেন। সন্ধ্যায় তাকে চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে অ’ভিযুক্ত মো. শাওন মিয়ার দুটি মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।