






রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মারকাযুল ইসলাম হাসপাতালের সামনে এখন প্রতিদিনই এমন মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ভিড় লেগে থাকে। এদের অধিকাংশই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই মরদেহগুলোর গোসল করানো কিংবা দাফন পর্যন্ত সম্পন্ন করে দিতে হয় আল মারকাযুল ইসলামি নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৯ হাজার ৮৯১ জন। এর মধ্যে ৪ হাজার ১২২ জনের দাফন কিংবা সৎকারের কাজ করেছে আল মারকাযুল ইসলামি সংস্থা। একদিনে সর্বোচ্চ ৫৬ জনের মরদেহ সৎকারের জন্য প্রস্তুত সংস্থাটি। অবাক করার বিষয় এই কাজে সম্পৃক্ত প্রায় ৫০ জনের কেউই এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়নি।







করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু হয় গত বছরের ১৮ মার্চ। আর এই সংস্থাটি প্রথম মরদেহ সৎকারে যুক্ত হয় ২৯ মার্চ। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন কর্মী মিলে দাফন, কাফন কিংবা গোসল করিয়েছেন ৪ হাজার ১২২ জনের মরদেহ। এই সময়ে যেখানে মোট মারা গেছে ৯ হাজার ৮৯১ জন।
ভয় আছে, আছে শঙ্কা। তারপরও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। স্বজনরা যখন মরদেহ ফেলে পালিয়ে গেছে তখনই খবর পেয়ে তারাই ছুটে গেছে স্বজন হয়ে। দাফন করেছে মরদেহ। মানুষ যে মানুষেরই জন্য।







আল মারকাযুল ইসলামি সংস্থার কর্মীরা বলছেন, অনেক মানুষ, আত্মীয়-স্বজন করোনার ভয়ে মরদেহের কাছে আসেনি। আমরা হাসপাতাল থেকে মরদেহ সংগ্রহ করেছি, জানাযা পড়ে দাফন শেষে বাসা বা বাড়িতে মৃত্যুর সনদও দিয়ে এসেছি।
ছোট্ট একটি হিসেবে তাদের কাজের বিশালতা ফুটে উঠে। দেশে ১০ এপ্রিল মারা গেছে ৭৭ জন। তারা গোসল করিয়েছে ৩০ জনের মরদেহ। পরদিন ৭৮ জনের মধ্যে ২৯ জন। ১২ এপ্রিল ৮৩ জনের মধ্যে ২৮ আর ১৩ এপ্রিল ৬৯ জনের মধ্যে ৩৫ জনের মরদেহ দাফনের জন্য প্রস্তুত করেছে আল মারকাযুল ইসলামি সংস্থার কর্মীরা। একদিনে সর্বোচ্চ ৫৬ জনের রেকর্ডও আছে তাদের। শুধু মুসলমান নয়; হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ কিংবা বিদেশি মরদেহ সৎকারও করেছে সংগঠনটি।







আল মারকাযুল ইসলামি সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামজা শহীদুল ইসলাম বলছেন, আমরা মরদেহ নিতে গিয়ে দেখেছি স্বজন উপস্থিত; তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলছে, দুঃখ প্রকাশ করছে। কিন্তু মরদেহ নিয়ে বের হওয়ার সময় কাউকে খুঁজে পাইনা, এমনও হয়েছে পরিস্থিতি।
অবাক করার বিষয় হচ্ছে মরদেহ দাফন করতে গিয়ে এখনো কোনো কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিলো মরদেহ থেকে করোনা ছড়ায় না। সে ধারণাটিকেই হয়তো সত্যতা দিয়েছে আল মারকাযুল ইসলামি।