‘সব পুড়ে ছাই হই গেছে, আমি এখন কই যামু’

‘আল্লাহ তুমি কি করলা? আমি কি দোষ করলাম আল্লাহ। এখন আমার আকাশ ছাড়া কোনো ছাউনি নাই। আল্লাহ তুমি কি করলা? আমার সব পুড়ে ছাই হই গেছে, আমি এখন কই যামু?’অগ্নিকাণ্ডে শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে এভাবেই

কথাগুলো বলছিলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চর বাটা ইউনিয়নের পূর্ব চরবাটা গ্রামের বাজার হোসেন বাড়ির মৃত আবুল হাশেমের স্ত্রী নুর জাহান কাজলি (৫০)।জানা যায়, ২০০৩ সালে স্বামী মৃত্যুর পর ২০ বছর ভিক্ষা করে যা পেতেন

তা দিয়ে কোনোরকম দিন পার করতেন বিধবা নুর জাহান। নিজের কোনো জায়গা না থাকায় বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জায়গায় একটা ঘর তুলে থাকতেন। একমাত্র ছেলে বাহার উদ্দিন (৩৫) পরিবার নিয়ে থাকেন অন্য জায়গায়। অসুস্থ হয়ে

বাধ্য হয়ে ছেলের কাছে কয়েকদিন আশ্রয় নেন বিধবা নুর জাহান। কিন্তু গত ৫ এপ্রিল (বুধবার) রাতে অগ্নিকাণ্ডে বিধবার সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডে শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে পাগলপ্রায় বিধবা নুর জাহান। সারাদিন পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া

ঘরের সামনে বসে থেকে কিছুক্ষণ পর হাউমাউ করে কান্না করছেন।স্থানীয় বাসিন্দা কামাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিধবার ছেলের অবস্থাও ভালো না তাই তাকে দেখে না। ভিক্ষা করে যা পায় তা দিয়ে কোনোরকম দিন যায়। এক রাতের

অগ্নিকাণ্ডে বিধবার সব পুড়ে শেষ। এখন দিনের বেলায় পোড়া ঘরের সামনে বসে থাকেন আর সারাক্ষণ কান্না করেন। রাতের বেলায় পাশের জাফরের বাড়িতে থাকেন।প্রতিবেশী জাফর ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতের বেলায় কেমনে যেন আগুন লাগে।

আমরা কেউ টের পাই নাই। যখন টের পাইসি তখন সব পুড়ে ছাই। এখন রাত হলে আমাদের ঘরে থাকতে দেই। কী করুম আমরা সবাই অসহায়। বিধবা সব থেকে বেশি অসহায়। ছেলে বাহার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দরবেশ বাজারের

সঙ্গে চর নঙ্গলিয়ায় থাকি। আমাদের একটু জায়গা নাই যে কিছু করুম। দিন এনে দিন খাই। মা অসুস্থ হওয়ায় কেউ দেখার নাই তাই আমার কাছে এনে রাখসি ৫ দিন। আমার নিজের অবস্থাও ভালো না। ৫ তারিখ ভোরে আগুন লাগার খবর শুনে

এসে দেখি আমাদের সব শেষ। বিধবা নুর জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বামী মরার পর থেকে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে খাই। ছেলেটাও আমায় দেখে না। যদি তার কাছে যাই তাহলে থাকতে দেয়। সরকারি জায়গায় একটা ঘর ছিল। এখন ত সব শেষ আমার।

খোলা আকাশ ছাড়া আমার আর কিছুই নাই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, আমি এখন কই যামু।পূর্ব চর বাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল বাসার মঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবাই তাকে কাজলি নামেই চেনে। আগুনে তার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন যে ঘর তুলবে সেই সামর্থ্য তার নাই। ছেলেটাও অসহায়, সে যে কিছু করবে তার উপায় নাই। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে বিধবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।