ক্রীড়াঙ্গনে সবাই অধিনায়ক হতে পারেন না। বিশেষ গুনাবলী সম্পন্ন, এমনকি নেতৃত্বের গুণ যাদের আছে তারাই এমন গুরু দায়িত্ব পান। যারা ঠিকঠাক নেতৃত্ব দিতে পারেন তারা সফল, যাদেরনেতৃত্বে ঘাটতি আছে কিংবা ব্যর্থতার হার বেশি তারা
কখনো সফলদের কাতারে পড়েন না। যুগে যুগে এমন অনেক অধিনায়ক আছেন যাদের জাদুকরী ছোঁয়ায় বদলে গেছে দলের পরিবেশ,মিলেছে চূড়ান্ত সাফল্য। তেমনই একজন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। যার নেতৃত্ব গুণের প্রশংসা
আপনাকে করতেই হবে। চলতি বিপিএলে মাশরাফির স্পর্শেই যে সিলেটের পালে নতুন হাওয়া বইছে। এখন সারাবছরই ব্যস্ত থাকতে হয় রাজনীতি নিয়েই। এমনকি এই বিপিএলও খেলছেন অনেক রাজনৈতিক ব্যস্ততা নিয়েই। তবুও মাঠে যখন প্রবেশ
করেন মাশরাফি হয়ে উঠেন অন্য মানুষ। যে মাশরাফি আর সবার জন্য শুধুই এক অনুপ্রেরণার নাম। মাশরাফি কী জাদুকর। সত্যিই কী ম্যাশ ছুলে বদলে যায় সবকিছু? নাকি মাশরাফি বিন মুর্তজা শুধুই একজন মিথ।
সেসব প্রশ্ন ছোড়া থাক অনন্ত পানে। এতসব উত্তর খোঁজার সাধ্যই কজনের আছে। আমরা বরং শুনতে পারি কিছু বাইশ গজের গল্প। যেসব গল্প মাশরাফি লেখেন সবুজ গালিচায়। কখনো কলার উঁচু করে, কখনো খোঁড়াতে থাকা হাটুটা নিয়ে,
কখনো আবার সতীর্থ কারো কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে। মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে কত গল্পই তো ডালপালা মেলেছে। কত গল্পই তো লেখা হয়, শোনা যায় বাতাসের সাথে। তবে সবকিছুরই তো একটা শেষ আছে। মাশরাফিকেও
তাই ফুরিয়ে যেতে হয়। প্রকৃতি সেই শূন্যস্থানও পূরণ করে দেয় হয়তো। তবুও আবার যখন তিনি বলটা হাতে তোলেন, আবার যখন অধিনায়কত্বের টুপিটা মাথায় ওঠে সবকিছু এক লহমায় পালটে যায়। এই মাশরাফির সাথে কেউ পেরে উঠে না আর।
এখন মাশরাফি নিজের মত করে দলটাকে সাজিয়েছেন। বিপিএলে টানা চার জয় পেয়েছে দলটি। সিলেট যেন অপ্রতিরোদ্ধ। মাঠে সিলেটের পারফরম্যান্সও প্রশংসায় ভাসছে। অথচ আগের কয়েক আসরে সিলেটের পারফরম্যান্স ছিল
যাচ্ছেতাই। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকেই অনেক আসর থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সিলেটকে। তবে এবার মাশরাফির নেতৃত্বে যে আগের অবস্থা হবে না সিলেটের, সেটি বুঝাই যাচ্ছে।বিপিএলে টানা চার ম্যাচ জিতলেও বিদেশিদের
অবদান সামান্য। চার ম্যাচের প্রতিটিতেই ম্যাচ সেরা দেশের ক্রিকেটার। প্রতি ম্যাচেই জয়ে মূল ভূমিকা দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের। আগের কোনো বিপিএলে যা দেখা যায়নি, সিলেট স্ট্রাইকার্সে এবার দেখা যাচ্ছে তেমন কিছুই।
লোকাল ক্রিকেটারদের চিনতে যে ভুল করেননি মাশরাফি। চমকপ্রদ এই পরিবর্তন ও পারফরম্যান্সর পেছনে দলের আবহ ও পরিবেশ বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান,
আকবল আলীদের একে একে দলে নেন। দলে নিয়েছেন রেজাউর রহমান রাজার মত একজন পেসারকেও। তবে এখানেই মাশরাফি ম্যাজিকের শেষ হয় না। দলের ভিতরে একটা বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে পারেন তিনি। সবার মধ্যে একটা তাড়না গেথে দিতে
পারেন তিনি। যা ভর করে শান্ত, হৃদয়, জাকিরদের মাঝে। মাঠে নামার আগে তাদের দেয়া হয় ফ্রি লাইসেন্স। সবার কাছে চাওয়া থাকে স্রেফ নিজের খেলাটা খেলার। হৃদয়ও সেই সাহসটা মাঠে
দেখিয়েছেন। নির্ভয় ব্যাটিং দিয়ে দলকে জিতিয়ে চলেছেন।
সব দল যখন নির্ভর করে বিদেশি ক্রিকেটারদের উপর। তখন মাশরাফি সেরাটা বের করে আনছেন এই লোকাল তরুণদের কাছ থেকে।এমনকি সিলেটের পুরো কোচিং প্যানেলেও নেই বিদেশি কেউ। তবুও টুর্নামেন্টের প্রথম চার ম্যাচে চার জয়।
দুই ম্যাচেই প্রায় ২০০ রান করে জেতা। প্রতিপক্ষকে ১০০ এর নিচে গুটিয়ে দেয়া।সবকিছুই ইতোমধ্যে দলটা করে দেখিয়েছে। এখনো অনেকটা পথ বাকি। তবে সিলেটকে একটা দল হিসেবে খেলতে দেখা যাচ্ছে। আর দলকে একটা সুতোয় গাঁথতে পারাটাই বোধহয় মাশরাফির সবচেয়ে বড় ম্যাজিক। যেমনটা একসময় তিনি বাংলাদেশ দলকে বেঁধেছিলেন।