২২, ৫০*, ২৩*—নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে এমন ঝকঝকে পারফরম্যান্স স্বর্ণা আক্তারের। তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল জামালপুরের এ নারী ক্রিকেটার। অথচ ক্রিকেটজীবনের শুরুটা তার ভালো হয়নি। দরিদ্র
পরিবারের সন্তান হওয়ায় ক্রিকেট সরঞ্জাম কেনারও অবস্থা ছিল না। কিন্তু বাবা-মায়ের সহযোগিতায় পেয়ে ক্রিকেটের সঙ্গে পথ চলা এগিয়ে নেন এ স্পিন অলরাউন্ডারের। এখন বিশ্বমঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল করে যাচ্ছেন তিনি। তাতে প্রশংসিত হচ্ছেন
স্বর্ণার বাবা-মাসহ পুরো পরিবার।বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেন স্বর্ণা। ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে পেশিশক্তির জানান দিয়েছিলেন তিনি। মূল মঞ্চে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে ছিলেন ২৩ রানে
অপরাজিত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭৮ স্ট্রাইক রেটে খেলেছিলেন ২৮ বলে ৫০ রানে অপরাজিত এক ইনিংস। গতকালও ঝড়ো ব্যাটে করেন ২২ রান। দুর্দান্ত খেলতে থাকা স্বর্ণাকে ঘিরে জামালপুরে উৎসবের আমেজ বয়ে যাচ্ছে। সবার সোশ্যাল মিডিয়ায়
ছড়িয়ে পড়ছে স্বর্ণার বিশাল বিশাল ছয়গুলোর ভিডিও ক্লিপস।অথচ স্বর্ণার ক্রিকেটজীবনের শুরুটা ছিল লড়াইয়ের। দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। বাদল হোসেন ও সনেখা বেগমের চার সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তিনি। পরিবারের কেউ ক্রিকেটার না হলেও
ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটে মিশে ছিলেন তিনি। পড়ালেখাতেও বেশ মনোযোগী তিনি। স্থানীয় সিংহজানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়েন।ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট-পাগল স্বর্ণাকে খেলার সরঞ্জাম বানিয়ে দিতেন মা সনেখা বেগমই। মেয়ের
ক্রিকেটের শুরুর গল্পটা তিনি শোনালেন এভাবে, ‘ছোট থেকেই স্বর্ণা নারিকেলের ডাগিয়া (পাতা ছাড়া ডালের অংশ) কিংবা ছোট কাঠ পাইলে ওইডা দিয়া খেলত। ওর ভাইরে (সজীব হোসেন) কইতো বল আইনা দিতো। এমন করেই ওর খেলা শুরু।’
মায়ের সহযোগিতা ও পরিবারকে পাশে পেয়ে এখন বিশ্বমঞ্চে লড়েছেন স্বর্ণা। তার ব্যাটে রানের পোয়ারা দেখে উচ্ছ্বসিত ভাই সজীব। তিনি বলেছেন, ‘আমরা নিঃসন্দেহে অনেক খুশি। আমরা চাই আমাদের স্বর্ণা সবসময়ই ভালো খেলুক এবং বাংলাদেশ
দল চ্যাম্পিয়ন হোক।’এই ভাঙা ঘর থেকেই নারকেলের ডাগিয়ার ব্যাট হাতে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন স্বর্ণা আক্তার। (ওপরে) মা-বাবার সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ব্যাটারএই ভাঙা ঘর থেকেই নারকেলের ডাগিয়ার ব্যাট
হাতে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন স্বর্ণা আক্তার। (ওপরে) মা-বাবার সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ব্যাটারস্বর্ণাকে ঘিরে বড় স্বপ্ন তার পরিবারের। ভবিষ্যতে বোনকে জাতীয় দলে দেখতে মুখিয়ে আছেন ভাই সজীবও। নিজেদের স্বপ্নের
কথা শোনালেন সজীব, ‘স্বর্ণা বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাক, এটা আমরা চাই।’স্বর্ণার বাবা বাদল হোসেন এক সময় জামালপুর শহরের দয়াময়ী মোড়ে একটি সেলুনে চুল কাটার কাজ করতেন। এখন মাদারগঞ্জ পৌরসভায় একটি দোকানে
কাজ করেন তিনি। মেয়েকে ঘিরে তারও স্বপ্নটা অনেক বড়। শুধু পরিবারই নয়, প্রতিবেশীরাও গর্বিত স্বর্ণার মতো বাঘিনীর পারফরম্যান্সে। প্রতিবেশী লিটন এবং রাহাত জানিয়েছেন, অভাব-অনটনের সংসারে স্বর্ণারা কখনো ঠিকমতো ভালো খেতে
পারেনি। যখন থেকে স্বর্ণা ভালো খেলতে শুরু করেছে, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে, তারপর থেকে ওর আয়ের টাকা- পয়সা দিয়ে বাসা ভাড়া পরিশোধ করেছে তার পরিবার। নিজেরাও ভালোমন্দ কিছু খাচ্ছে। স্বর্ণার প্রতিবেশী ও স্বজনদের প্রত্যাশা, স্বর্ণা দেশের সুনাম কুড়িয়ে আনছে। দরিদ্র স্বর্ণার পরিবারের দিকে সরকারের সুনজর প্রত্যাশা করছেন তারা।